Ensure sustainable development: HPM Sheikh Hasina calls upon wolrd leaders

জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা বন্ধ করা না গেলে অভিযোজন প্রক্রিয়া যে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দশ দিনের আয়োজনের ষষ্ঠ দিন সোমবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে তার এই আহ্বান আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের এই উপমহাদেশের দেশগুলোকে সব থেকে বেশি নাজুক করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের কোনো ভূমিকা নাই, তারপরও আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাই আমরা অভিযোজনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারি, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা বন্ধ করা না গেলে অভিযোজন প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম বা সিভিএফ-এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

“গত বছর ঢাকায় গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন, বাংলাদেশ এর অফিস চালু করা হয়েছে। ঢাকা অফিস দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কী কী করনীয় সেটা খুঁজে বের করা এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে আমি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, “এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও অর্ধাহার বা অনাহারে থাকে। অনেকে জীবন ধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।”

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় যে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তা যথাযথভাবে ব্যবহার করে এ অঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব বলে মত দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এ অঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস আমরা অব্যাহত রাখব।”

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দশ দিনের এই আয়োজনে প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরাও সঙ্গী হচ্ছেন। সোমবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন নেপালের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।

শেখ হাসিনা বলেন, “বর্তমান বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজ। একা চলার কথা চিন্তা করা যাবে না। আমরা সম্মিলিতভাবে চিন্তা করব। তবে দক্ষিণ এশিয়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এখানে অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে। আর রয়েছে জনগণ। আমরা সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে একে অপরের হাত ধরে যদি এগিয়ে যাই, অবশ্যই আমরা এ অঞ্চলের মানুষকে ক্ষুধা, দারিদ্র থেকে মুক্তি দিয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।”

দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্কট ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এমন একটি অঞ্চলে বাসবাস করি যেখানে প্রতিনিয়ত আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়। আর তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যদিও আমরা খুব দায়ী না, কিন্তু এই অভিঘাত থেকে আমরা কিন্তু রক্ষা পাই না। আমাদের উপর প্রতিনিয়ত আঘাত আসে।

“তাই আমরা মনে করি যে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত দক্ষিণ এশিয়াকে আরো যত্নবান হতে হবে। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশগুলো যেমন ভূমিকম্প, বরফ ধস, ভূমিধস, ঢল বা হরকা বানের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আমাদের এই বাংলাদেশের মত সাগর উপকূলবর্তী যে অঞ্চল, সেখানে প্রতিনিয়ত বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প,অতিবৃষ্টি, খরা- এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে।”

নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তার উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানের মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। আমরা নিজেরা সম্মানিত হয়েছি। গতবছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তিনি সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি। সব প্রোগ্রামই তখন ভার্চুয়াল করেছিলাম এবং তখন তিনি তার বার্তা পাঠিয়েছিলেন, বাণী দিয়েছিলেন। আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সে কথা স্মরণ করছি।”

নেপালকে বাংলাদেশের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেপালের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, নানাভাবে সহায়তা করার পাশপাশি মুক্তিযুদ্ধে নেপালের জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র দিয়েও সাহায্য করেছে। যেসব দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে সবার আগে স্বীকৃতি দিয়েছিল, নেপাল তাদের অন্যতম। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে নেপাল বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।

নেপালের জনগণের সেই অবদানের কথা বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পৃথিবীর বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো যারা সহযোগিতা করেছিল, ২০১২ এবং ২০১৩ সালে আমরা তাদের সম্মাননা জানাই। সেই সাথে নেপালের ১১ জন নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননায় আমরা ভূষিত করেছিলাম।”

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের অবস্থান প্রায় অভিন্ন বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

“আমরা নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, নৌপথ, সড়ক, রেল এবং বিমান যোগাযোগ, সেই সাথে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বিশেষ করে পানি-বিদ্যুৎ খাত, পর্যটন এবং পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি করে যাচ্ছি।

গত মাসে বাংলাদেশের মত নেপালেরও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের দুই দেশের চলার পথ আরো সুগম হবে।”

“আমরা ইতোমধ্যে বিবিআইএন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। এর বাইরেও আমারা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বা ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যার ফলে আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো তারা পরষ্পরকে সহযোগিতা করতে পারবে।”

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান, স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে।

এছাড়া গভীর বেদনার সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে প্রাণ হারানো পরিবারের সদস্য এবং ওই রাতে যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদেরও স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।”

Techno Outsource Uk
Top